রাজশাহীর আলোচিত হুন্ডি কারবারি মখলেসুর রহমান মুকুলকে (৫৫) আটক করেছে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ। মুকুলকে আটকের বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান নিশ্চিত করেছেন ।
তিনি জানান, মঙ্গলবার দিনগত রাতে চলমান বিশেষ অভিযানে কক্সবাজারের একটি হোটেল থেকে মুকুলকে আটক করা হয়েছে। তার বাড়ি রাজশাহী বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন। মুকুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রয়েছে কিনা সেই বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
মুকুল রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার কাঁঠালবাড়িয়া গোবিন্দপুর গ্রামের ওয়াজি মণ্ডলের ছেলে। গত কয়েক বছরে মুকুল রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অর্থায়ন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দলীয় ছত্রছায়ায় তিনি বড় ঠিকাদারি কাজও বাগিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক টাকাপাচার সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ায় রাজশাহীতে তিনি হুন্ডি মুকুল নামে পরিচিত।
এদিকে মুকুলের কক্সবাজারে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র উপকমিশনার (ডিসি) গাজিউর রহমান জানান, কক্সবাজার পুলিশ মুকুলকে আটক করেছে বলে আরএমপিকে জানানো হয়েছে। যতদূর জানা গেছে, ৫ আগস্ট রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার কয়েকটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আরও কোনো মামলা তার বিরুদ্ধে আছে কিনা-আমরা খুঁজে দেখছি। অন্যদিকে মখলেসুর রহমান মুকুল ওরফে হুন্ডি মুকুলের আটকের বিষয়টি রাজশাহীতে জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়।
স্থানীয়রা জানান, মাত্র কয়েক বছরে মুকুল মুদি দোকানি থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কালো টাকা সাদা করতে ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সিটি করপোরেশনের বড় কাজগুলো এক সময় মুকুল করেছেন। তিনি রাজশাহীর পদ্মার অধিকাংশ বালুঘাট ইজারা নিয়ে একচ্ছত্র বালু ব্যবসা করে কোটি টাকা কামিয়েছেন। এমনকি ৫ আগস্টের পরও মুকুল রাজশাহীর সেখপাড়া প্রেমতলী বালুঘাটটি প্রায় ২০ কোটি টাকা ইজারা নিয়েছেন। গত বছর অধিকাংশ বালুঘাটই তার দখলে ছিল।
জানা গেছে, মুকুল সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে হন্ডির কারবার চালিয়েছেন। এভাবে তিনি অবৈধভাবে অঢেল টাকার মালিক হন। কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। নগরীর ভেতরে ও বাইরে এবং দেশের বাইরেও বিভিন্ন দেশে মুকুল বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন।
এদিকে ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার সফল বিপ্লবের পর মুকুল আত্মগোপন করেন। তবে এ সময়ে তিনি রাজশাহীতে বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সখ্য স্থাপন করতে সক্ষম হন। কাউকে দামি গাড়ি কিনে দিয়ে, কাউকে বিনা টাকায় বালুঘাটের শেয়ার দিয়ে কাউকে বা নগদ টাকা দিয়ে নিজের সমর্থনে নেন।
চলতি বছর মুকুলের বালুঘাটে রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার কয়েকজন বিএনপি নেতা শেয়ার নিয়েছেন। ফলে মুকুল একাধিক মামলার আসামি হলেও ঢাকা ও রাজশাহীতে নিরাপদেই অবস্থান করছিলেন।