২৪ জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার প্রথম শহীদ আহসান হাবীবের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ এবং চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বেলা এগারোটার দিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এর নেতৃত্ব প্রশাসনের কর্মকর্তারা চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের আছদআলী পাড়ায় পৌঁছে শহীদ আহসান হাবীবের কবরে শ্রদ্ধা জানান। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা শহীদ আহসান হাবীবের কবর জিয়ারত শেষে বিশেষ মোনাজাত করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফউদ্দীন শাহীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসেন সজিব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইদুজ্জামান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) রুবাইয়া আফরোজ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ শাহিদুল আলম, সহকারী কমিশনার এম ইঞ্জারুল হক, কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস, চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ( এএসপি) অভিজিৎ দাশ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) রুপায়ন দেব, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলামসহ উপজেলা ও থানা পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ।
এসময় শহীদ আহসান হাবিব এর পরিবারের সদস্য ছাড়াও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক হাবিব উল্লাহ মিছবাহ ও ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ ও উপস্থিত সকলেই শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশেষ মোনাজাত করেন। একইসাথে নতুন বাংলাদেশ বির্নিমানে যারা শহীদ হয়েছেন তাঁদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সমবেদনা জানান।
উল্লেখ্য ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কক্সবাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আহসান হাবিব (২৩)।
তিনি চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আছদআলী পাড়ার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনের ছেলে। আহসান হাবিব চকরিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে থাকতেন কক্সবাজার শহরে।
পরিবার এবং স্থানীয় লোকজন জানান, আহসান হাবিব নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। চার সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবা হেলাল উদ্দিন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হলেও দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। আহসান হাবিব পড়াশোনার পাশাপাশি অসুস্থ বাবার সংসারে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিলেন।তাই সংসারের ঘানি টানতে তিন বছর ধরে কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড় এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাসিক নয় হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন আহসান হাবিব।
শহীদ আহসান হাবিবের পরিবার সদস্যরা বলেন, আহসান হাবিবের স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করবে। একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে। অসচ্ছল পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু ঘাতকের একটি নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে তাঁর সব স্বপ্ন। শোক সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে পুরো পরিবারকে।
শহীদ আহসান হাবিব এর বাবা হেলাল উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারে লেখাপড়া চাকরি করলেও সময় পেলেই বাড়িতে ছুটে আসতো আহসান। সবসময় পরিবারের খোঁজ খবর নিত। মা-বাবা ভাই-বোন কারো কোন অভাব থাকলে তা পুরণের আপ্রাণ চেষ্টা করতো।
তিনি বলেন, আহসান হাবিব সেই ছোট বেলা থেকে দেশের প্রতি তার খুব টান ছিল। আমার ছেলে খুব সাহসীও ছিল। তার স্বপ্ন ছিল সে একদিন সরকারি চাকরি করে জীবনচিত্র পরিবর্তন করবে, পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাবে। কিন্তু ঘাতকের একটি বুলেট আমার ছেলেকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। পরিবারের সব সম্ভাবনা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এরপরও আমি খুশি এই কারণে, আমার ছেলের এই আত্মত্যাগে ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।