শিরোনাম ::
রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ে গোলাগুলি, সেনা অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার টাঙ্গাইলে এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচির নিরাপত্তায় থাকবে ৯ শতাধিক পুলিশ দীর্ঘ পাঁচ মাস ১০ দিন বন্ধ থাকার পর কুয়েটে ক্লাস শুরু আজ তিন ক্যাটাগরিতে আহত ১৭৫৭ জন জুলাইযোদ্ধার গেজেট প্রকাশ থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানাল বাংলাদেশ টঙ্গীতে ঢাকনাবিহীন ড্রেনে পড়ে নিখোঁজের ৩৬ ঘণ্টা পর নারীর মরদেহ উদ্ধার আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনে আসামিপক্ষের শুনানি আজ আজ বিশ্ব বাঘ দিবস, ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’ বেইজিংয়ে টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:১৭ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

চকরিয়ায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ১০ হাজার পরিবারের বসবাস,নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং প্রশাসনের

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া::কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি জনপদে অন্তত ১০ হাজার পরিবার দীর্ঘ দুইযুগের বেশিসময় ধরে পাহাড়ের ঢালু এবং পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণে মাটি নরম হয়ে একাধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ি এলাকায় যে কোনো মুহূর্তে পাহাড় ধসে পড়ে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
পাহাড়ে বসবাসরত বেশিরভাগ পরিবার ভিটাবাড়ি বা বাস্তুহারা। আবার অনেকে মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়িভিটা হারিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে বসতি গড়েছে।

জনপ্রতিনিধিরা জানান, পাহাড়ি জনপদে বসবাস করা প্রানহাণির ঝুঁকি জেনেও দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত এসব পরিবার গুলো সেখান থেকে সরে যাচ্ছে না। এরপর পাহাড়ে অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা এড়াতে গত বেশকিছু দিন ধরে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার মোট ৮ ইউনিয়নের একটি বিশাল অংশের জনগোষ্ঠীর বসবাস স্থানীয় বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল তথা পাহাড়ি জনপদের জায়গায়। তদমধ্যে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মছন্যাকাটা, বানিয়ারছড়া, মাহমুদনগর, পাহাড়তলি, ভিলেজারপাড়া, হারবাং ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া, শান্তিনগর, মইস্যার ঘোনা, ফইজ্যার ডেবা, লম্বা ঘোনা, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগর, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের উত্তর মানিকপুর, ভিলেজারপাড়া, খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া, নয়াপাড়া, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট হাসিনাপাড়া, ডুমখালী, রিংভং, কাকারা ইউনিয়নের বার আউলিয়া নগর, শাহ ওমরনগর, বাদশারটেক, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়া, উচিতারবিল, ছগিরশাহ কাটা, ছায়েরাখালী এবং বমু বিলছড়ি ইউনিয়নে অন্তত ১০ হাজার পরিবার চরম ঝুঁকিতে বসবাস করছে। প্রায় দুই যুগের বেশিসময় ধরে বাস্তুহারা এসব পরিবার গুলো পাহাড় ধসে প্রানহাণির ঘটনা ঘটে তা আগে থেকে জেনেও সেখানে মৃত্যু ঝুকি নিয়ে বসবাস করে আসছেন।

জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অবিরাম ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি জনপদের এসব এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাতে এবারও সেখানে ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহেরজ উদ্দিন বলেন, ‘চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জে ৩ হাজার ৩৪৫টি এবং ফুলছড়ি রেঞ্জে ৩ হাজার ৪৭১টি পরিবারসহ বন বিভাগের মোট ছয়টি রেঞ্জে অন্তত ১২ হাজার পরিবার বসবাস করছে।
তবে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ২ হাজার পরিবার।
পাহাড় ধসের ঝুঁকি থেকে এসব পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রশাসন উদ্যোগ মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাহাড়ে বসবাসরত পরিবার গুলোকে ভারী বৃষ্টিপাতের সময়
সর্তকতা অবলম্বনের জন্য তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

একইভাবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন চকরিয়া উপজেলার হারবাং ও বরইতলী বনবিটের অধীন পাহাড়ি এলাকায় আরো দুই হাজার পরিবার দীর্ঘ বছর ধরে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাহাড়ের ঢালুতে বসবাস করছে।

চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসরত বেশিরভাগ পরিবার দরিদ্র শ্রেণির। মুলত পরিবার গুলো অভাব-অনটনে জর্জরিত হয়ে ও নদীভাঙনের শিকার হয়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে।’ ইচ্ছে করলে সেখান
থেকে অন্যত্রে গিয়ে বসবাস করার মতো সামর্থ্যও নেই তাদের।

চকরিয়া উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের
সভাপতি মাহমুদুর রহমান মাহমুদ বলেন, অতীতে উন্নয়ন কাজের অজুহাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে
পাহাড় কাটা হয়েছে। আবার এখনো অনেক স্থানে মাটি খেকো চক্র সংঘবদ্ধ হয়ে বেসুমার পাহাড় কেটে মাটি লুটের কারবার চালাচ্ছে। বাড়িভিটা তৈরি করতেও পাহাড় কাটা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্ষাকালে ভারী বর্ষণে ক্ষতবিক্ষত এসব পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যায়। এতে যেকোনো সময় পাহাড় ধসে পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে পাহাড়ে বসবাসরত জনগণকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি পাহাড় কেটে মাটি লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে।

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার যেসব ইউনিয়নগুলোতে পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে মানুষ বসবাস রয়েছে, সেখানে আমরা সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছি।

এরই অংশ হিসেবে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করা হচ্ছে। জনগনকে জানানো হচ্ছে, ভারী বৃষ্টিপাতের সময় অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা এড়াতে পাহাড়ে বসবাসরত পরিবার গুলোকে নিরাপদে সরে যেতে।

তিনি বলেন, পাহাড় ধসের সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় বনবিভাগের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও গ্রাম পুলিশ সদস্যদের সজাগ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


আরো খবর: