কক্সবাজার থেকে ট্রেনে করে সম্প্রতি ইয়াবা পাচার বেড়েছে। এর পেছনে তিনটি সক্রিয় কারণ রয়েছে। প্রথমত, কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে লাগেজ স্ক্যানার, যাত্রী তল্লাশির সুযোগ না থাকা। দ্বিতীয়ত, কক্সবাজার-ঢাকা (মাঝে চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি) বিরতিহীন, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে মাঝখানে তল্লাশির সুযোগ কম থাকা।
তৃতীয়ত, কক্সবাজার রেলস্টেশনে রেলওয়ে পুলিশের থানা না থাকা। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও বলছেন, সম্প্রতি ট্রেনে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় ইয়াবা পাচার বেশি হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সড়কপথে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসতে ও ঢাকায় পৌঁছতে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হয়। সড়কপথে কঠোর নজরদারি এড়াতে মাদক পাচারকারী চক্রের একটি অংশ ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক পাচারে ট্রেনকে বেছে নিতে পারে।
ট্রেনে মাদক পাচার রোধে কক্সবাজার স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশের থানা স্থাপন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ড্রাগ ডিটেকশন স্ক্যানার বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে।
কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামের দুটি বিরতিহীন (শুধু চট্টগ্রাম স্টেশনে থামে) ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে সৈকত ও প্রবাল এক্সেপ্রেস ট্রেন চলাচল করে।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ মার্চ রাতে রাজধানী ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি থেকে ৩৩ হাজার ৫০০ ইয়াবা জব্দ করে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ।
তবে এ সময় কাউকে আটক করা যায়নি। পুলিশ সেই সময় বলেছিল, মাদক কারবারিরা ট্রেনে ইয়াবা বহনের সময় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে ইয়াবা এক জায়গায় রাখে আর নিজেরা অন্য জায়গায় বসে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে ইয়াবাসহ বেশ কয়েকজন মাদক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ট্রেনে ইয়াবা পাচার করতে তেমন কোনো বাধায় পড়তে হয় না। পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার পথে শুধু চট্টগ্রাম স্টেশনেই যাত্রাবিরতি করে কিছু সময়ের জন্য।
ফলে মাদক পাচারকারীরা ট্রেন দুটিকে টার্গেট করেই ইয়াবা পাচার করছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তথ্য মতে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত তিন হাজার ২১২টি অভিযানে তিন লাখ ৫২ হাজার ৫৯১ পিস ইয়াবা জব্দ করেছে তারা। এ ছাড়া ১০৮ কেজি গাঁজা, এক হাজার ৫২৫ লিটার চোলাই মদ জব্দ করেছে। এসব ঘটনায় ৭৩৪টি মামলা এবং ৮০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সব অভিযানই পরিচালনা করা হয়েছে সড়কপথে। তারা এই সময়ে ট্রেনে কোনো অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য পাচ্ছি, বর্তমানে ট্রেনের মাধ্যমে প্রচুর ইয়াবা পাচার হচ্ছে। কিন্তু আমরা কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনে উঠতে না পারায় কোনো ইয়াবা কারবারিকে গ্রেপ্তার করতে পারি না। রেল থেকে নেমে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গন্তব্যে ইয়াবা নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি।’
রেলওয়ে পুলিশ বলছে, কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখানে এখনো স্থাপন করা হয়নি রেলওয়ে পুলিশের কোনো থানা। চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার অধীনে নিরাপত্তা কার্যক্রম চালানো হয়। জনবলসংকট থাকায় পুলিশকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থানার ওসি এস এম শহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কক্সবাজার এখন আমাদের অধীন। তবে এই জনবল দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং সম্ভব নয়। রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনে কক্সবাজার ও দোহাজারী এলাকায় থানা করার প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া আছে। সেই সঙ্গে পাঁচটি ফাঁড়িরও প্রস্তাব দেওয়া আছে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন মোল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কক্সবাজারে ইয়াবা ধরতে নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা ছাড়াও অন্যান্য সংস্থাও সক্রিয়। কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের তল্লাশির জন্য পোর্টেবল ও আধুনিক ড্রাগ ডিটেকশন স্ক্যানার চাওয়া হয়েছে। তা এখনো পাইনি। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’