জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছয়জন শীর্ষ নেতার আকস্মিক কক্সবাজার সফর ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ও উত্তেজনার পারদ চড়ছে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এনসিপির শীর্ষ নেতারা ইনানীর বিলাসবহুল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা-তে (সাবেক রয়্যাল টিউলিপ) পৌঁছানোর পরপরই সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা হোটেলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে যখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই এনসিপি-র ছয় শীর্ষ নেতার একসঙ্গে কক্সবাজার সফর অনেকের মনেই প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই সফরের মূল কারণ কী? তারা কি সত্যিই ব্যক্তিগত অবকাশ যাপনে এসেছেন, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে কোনো গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য? এমন দাবী স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দের।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বেলা ১১টা নাগাদ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকা থেকে আসেন। এনসিপি-র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ, তার স্ত্রী ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এবং মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ সহ ছয়জন নেতা ছিলেন সেই দলে। তারা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার না করে সাধারণ যাত্রীদের গেট দিয়ে বেরিয়ে হয়ে যান।
এদিকে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপি নেতারা সি পার্ল রিসোর্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের শ্লোগান আর প্রতিবাদী বক্তব্য দিয়ে হোটেলের সামনে অবস্থান নেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা এই কথিত বৈঠককে ‘দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম অবমাননা’ এবং ‘দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানান। বিএনপি নেতারা হুঁশিয়ারি দেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না এবং এই ধরনের অপতৎপরতা প্রতিহত করা হবে।
এই উত্তেজনার মাঝে সি পার্ল রিসোর্টের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান পিটার হাসের আগমনের খবরকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “পিটার হাস নামে কোনো ব্যক্তি আমাদের হোটেলে নেই।”
একই সুর শোনা যায় এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী-এর কণ্ঠেও। তিনি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা ব্যক্তিগত কাজে কক্সবাজারে এসেছি। আমাদের নিয়ে একটা মিডিয়া প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। মিডিয়া ইনটেনশনালি এই কাজটা করতেছে।”
ঢাকায় যখন বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান চলছে, তখন তারা কেন কক্সবাজারে অবকাশ যাপন করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের সকল নেতাই ঢাকায় থাকবেন এমনটা জরুরি নয়।
এদিকে এমন স্পর্শকাতর সময়ে দলের এতজন শীর্ষ নেতার একসঙ্গে কক্সবাজার সফর করা এবং তা নিয়ে এত গুঞ্জন তৈরি হওয়া—সবকিছু মিলিয়ে এই সফরটি এখনো রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
###