শিরোনাম ::
মেট্রোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে আমন্ত্রণ জানালেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী চিকিৎসকদের নিয়ে আইন উপদেষ্টার মন্তব্যে ড্যাবের প্রতিবাদ কানাডার তুষারে জমে থাকা কান্না ৪ শাখার সঙ্গে জরুরি মতবিনিময় সভা ডেকেছে ছাত্রদল রোববার সকালের মধ্যে প্লাবিত হতে পারে ৮ জেলার নিম্নাঞ্চল নেতানিয়াহু বর্তমানে নিজেই এক সমস্যা, চাপ বাড়াবে ডেনমার্ক আসনের ভাগ দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে কেনা যাবে না রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে জুলাই সনদের খসড়া, চাওয়া হলো মতামত চিকিৎসকদের উদ্দেশে যা বললেন আইন উপদেষ্টা রামুতে নানা আয়োজনে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী উদযাপন
August 17, 2025, 4:13 am
নোটিশ::
আমাদের নতুন ডোমেইনে আপনাকে স্বাগতম, কক্সবাজার পোস্ট ডটকমের জনপ্রিয়তাকে পুজিঁ করে অনেক নতুন ফেইসবুক পেইজ খোলা হয়েছে,তাদের কার্যকলাপের জন্য আমরা দায়ী নয়  

কানাডার তুষারে জমে থাকা কান্না

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: রবিবার, আগস্ট ১৭, ২০২৫


ছবিতে শাহরিয়ার মাহির খান, অ্যাঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈ ও আরিয়ান আলম দীপ্ত

টরন্টো শুধু একটি শহরের নাম নয়, বরং হাজারো স্বপ্নের ঠিকানা। কানাডার অন্যতম ব্যস্ত মহানগর, যেখানে মানুষ আসে দূর-দূরান্ত থেকে, এক নতুন জীবন গড়ার প্রত্যাশায়। বরফে মোড়া সকালে কেউ হাঁটে ইয়ং স্ট্রিট ধরে, কেউ ছুটে চলে সাবওয়ের ভিড়ে, আবার কেউ ব্যস্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে।

টরন্টো শুধু কানাডার আর্থিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়, এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়-নগরী। এখানে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো, রায়ারসন ইউনিভার্সিটি (বর্তমানে Toronto Metropolitan University), ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, জর্জ ব্রাউন কলেজ, সেনেকা কলেজ, সেন্টেনিয়াল কলেজ, হাম্বার কলেজ—এগুলো শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, বরং তা যেন হাজারো তরুণ-তরুণীর জীবনে আলো জ্বালিয়ে তোলার বাতিঘর।

বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা টরন্টোকে বেছে নেয়ার বড় কারণ হচ্ছে এখানকার শিক্ষার মান। উত্তর আমেরিকার অন্যতম উচ্চমানের শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রযুক্তি ও গবেষণার আধুনিক সুবিধা, বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশ, এবং পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ—এসব মিলে টরন্টো এক আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে ওঠেছে। ২০২৩ সালের হিসেবে শুধু টরন্টোতেই আড়াই লক্ষাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যাদের উল্লেখযোগ্য অংশ দক্ষিণ এশিয়া থেকে আগত; আর সমগ্র কানাডায় এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক মিলিয়ন।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন থাকে বড়। তারা চায়, একদিন বড় কোনো কর্পোরেট অফিসে কাজ করবে, নিজের পরিচয় গড়বে বিশ্বের মানচিত্রে। কেউ কেউ চায় মা-বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা আধুনিক করে তুলতে, কেউ চায় ডাক্তার, কেউ সাংবাদিক, কেউবা প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হতে।

বাবা কুমার বিশ্বজিৎ, মা নাইমা সুলতানার সাথে নিবিড় কুমার

তাদের আসার পথ সহজ নয়। IELTS প্রস্তুতি, ভিসা ইন্টারভিউ, ভর্তি আবেদন, এজেন্টের খরচ, ব্যাংক স্টেটমেন্টের দুশ্চিন্তা, অভিভাবকদের চোখে-মুখে একসাথে আশা ও ভয়—সব মিলিয়ে প্রতিটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাড়ি দেয় যেন এক বিশাল সাগর।

তবে কানাডায় এসে সেই ছাত্রজীবন শুধুই ক্লাস আর পরীক্ষা ঘিরে সীমাবদ্ধ থাকে না। ক্লাসের বাইরে থাকে পার্টটাইম চাকরি—কখনও কফিশপ, কখনও গোডাউনে প্যাকেজিং, কিংবা Uber Eats-এর ডেলিভারি। সবকিছু মিলিয়ে জীবনের স্বাদ তারা খুঁজে পায় এক নতুনরূপে।

অ্যাঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈ, ২০ বছর বয়সী এক প্রাণবন্ত তরুণী। ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্রী। তাঁর স্বপ্ন ছিল একদিন হিসাবরক্ষক হয়ে বাংলাদেশে গিয়ে পরিবারের গার্মেন্টস ব্যবসা চালানো। সেই ছোটবেলায় যে মেয়েটি স্কুল ডান্সে সহপাঠীদের টেনে মঞ্চে তুলত, সে-ই কানাডার মঞ্চে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চেয়েছিল। শ্রেয়া ছিলেন নিঃস্বার্থ, সদা হাস্যোজ্জ্বল, বন্ধুবান্ধবদের পাশে দাঁড়ানো এক আত্মপ্রত্যয়ী তরুণী।

শাহরিয়ার মাহির খান, মাত্র ১৭ বছর বয়সে টরন্টো এসেছিলো। জর্জ ব্রাউন কলেজের শিক্ষার্থী। সে ছিলো অত্যন্ত নম্র স্বভাবের, সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

আরিয়ান আলম দীপ্ত, হাসিখুশি, ভিডিও গেমস-পাগল, বন্ধুদের প্রাণ। হাম্বার কলেজের শিক্ষার্থী। তাঁর এক বন্ধু লিখেছে, “তুমি তো এক শিশুর মতো ছিলে, আজ তুমি নেই—এই সত্যটা মেনে নেওয়া যায় না।”

নিবিড় কুমার—যে দুর্ঘটনার সময় গাড়ি চালাচ্ছিলো, সে তখন ছিলো মৃত্যুর সাথে লড়াইয়ে। চিকিৎসকরা তার শরীরে একাধিক সার্জারি করেন। আগুনে পোড়া ক্ষতের পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণাও ছিল প্রবল। তার বাবা কুমার বিশ্বজিত ও মা নাইমা সুলতানা দিনরাত ছেলের পাশে কাটান। বর্তমানে জানা গেছে, নিবিড়ের অবস্থা স্থিতিশীল এবং সে ধীরে ধীরে সেরে উঠছে।

একটি গাড়ি, চারটি স্বপ্ন, একটি রাত—আর পুরো একটি কমিউনিটির শোক। টরন্টোর বুকে আজও বাতাসে ভেসে বেড়ায় শ্রেয়ার হাসি, দীপ্তর প্রাণবন্ততা, শাহরিয়ারের সৌম্যতা। তারা এসেছিল জীবনের জন্য, বিদায় নিয়েছে নীরবতায়।

এই লেখাটি শুধু তাদের স্মরণে নয়, বরং প্রতিটি অভিবাসী তরুণের প্রতি এক অশ্রুসিক্ত আহ্বান—“গতি নয়, নিরাপত্তা হোক তোমার যাত্রার সঙ্গী। জীবনটাকে বাঁচাও—শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয়, তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য।”



আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর: