ঢাকা, ০৫ আগস্ট – ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে একটি চোখ হারিয়েছেন দিনমজুর পারভীন। আরেক চোখেও ঝাপসা দেখেন। তার তলপেটেও গুলি করে পুলিশ, যা এখনো বের করা হয়নি। বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা পারভীন, এই অবস্থায় শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন পুলিশের নৃশংসতা। তার এই করুণ পরিণতির জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করা শেখ হাসিনাই দায়ী বলে জানান পারভীন।
এভাবেই নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্মমতার কথা জানান জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার রাষ্ট্রপক্ষের তৃতীয় সাক্ষী পারভীন।
সোমবার (৪ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জবানবন্দি পেশ করেন তিনি। এরপর তাকে আসামিপক্ষের জেরা শেষে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ৬ আগস্ট পরবর্তী দিন ঠিক করেন আদালত।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গুলিতে চোখ হারানো পারভীন জবানবন্দিতে যা বলেন
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের তৃতীয় সাক্ষী পারবভীন ট্রাইব্যুনালে দেওয়া তার জবানবন্দিতে জানান, ঘটনার সময় তিনি থাকতেন রাজধানীর কুতুবখালী। দিনমজুরের কাজ করতেন। ১৮ জুলাই বিকেলে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দিতে পারভীন বলেন, ‘কাজ থেকে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলাম। আমি যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসার পর দেখতে পাই রাস্তার ওপরে অনেক মানুষ পড়ে আছে, কারও হাত নেই, কারও পা নেই। ফ্লাইওভারের নিচে দেখি একটি ছেলে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। ছেলেটার সারা শরীর রক্তাক্ত। তার দুই চোখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। দেখে আমার মায়া হয়, আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি ছেলেটির বয়স ১৮-১৯ হবে। আমি তাকে টেনে তুলে রিকশা খুঁজছিলাম।’
পারভীন জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘আমার অপারেশন করা হয়েছে ৫ আগস্টের পর। এই অপারেশনে চোখ থেকে একটি গুলি বের করা হয়। তবে তলপেটের গুলিগুলো বের করা হয়নি। বর্তমানে আমি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা, এরপরও ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আদালতে এসেছি। আমার এক চোখ নষ্ট। আরেক চোখে ঝাপসা দেখি। আমার এই অন্ধত্বের জন্য একমাত্র শেখ হাসিনা দায়ী। শেখ হাসিনা ছিল পুলিশের বাপ-মা, তার নির্দেশে পুলিশ গুলি করেছে। তার নির্দেশ ছাড়া এভাবে গুলি করতে পারে না। হাজার হাজার মানুষ আহত ও নিহত হয়েছে।’
সূত্র: জাগো নিউজ
এনএন/ ০৫ আগস্ট ২০২৫