নয়াদিল্লি, ২৮ জুলাই – প্রায় ২০ বছর ধরে নিজের হাতে একের পর এক লাশ কবর দিয়েছেন, কখনো বা ডিজেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন, এমনই দাবি তার। প্রশ্ন করলেই জুটতো মারধর, হুমকি। প্রাণের ভয়ে টুঁ শব্দটিও করতে পারেননি। অবশেষে ৩০ বছর পরে আতঙ্ককে হারিয়ে দিয়েছে অপরাধবোধ। তার পরেই সরাসরি পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর এক অভিযোগ জানিয়েছেন ভারতের কর্নাটকের ধর্মস্থলা মন্দিরের এক সাবেক সাফাইকর্মী।
তার দাবি, ওই মন্দিরচত্বরে ও আশপাশে পোঁতা রয়েছে অসংখ্য লাশ, যাদের বেশিরভাগই নাবালিকা। নিজের হাতে তিনি বহু ধর্ষিতার দেহ কবর দিয়েছেন। তবে অভিযোগপত্রে কারো নাম উল্লেখ করেননি ওই ব্যক্তি। তার আর্জি, পুলিশ যেন দেহাবশেষ তুলে এনে তদন্ত শুরু করে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২২ জুলাই তদন্ত শুরু করেছে কর্নাটক পুলিশের এক বিশেষ দল (এসআইটি)।
অভিযোগকারী কর্ণাটকের দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। আদালতের নির্দেশে তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ধর্মস্থলা মন্দিরে সাফাইকর্মীর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। নেত্রাবতী নদী মন্দিরের গা ঘেঁষে গিয়েছে, সেখানেই মূলত সাফাইয়ের কাজ করতেন।
তার দাবি, হঠাৎ করেই কয়েক দিন পর পর নদীর পাশে লাশ পড়ে থাকতে দেখতেন। বেশিরভাগ নারীদেহ। প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বলে মনে করলেও পরে তিনি দেখেন, নারীদেহগুলিতে রয়েছে নির্যাতনের চিহ্ন। বেশির ভাগ দেহের নিম্নাঙ্গের কাপড় নেই। কারও কারও শরীরে অ্যাসিডে পোড়ার ক্ষত।
• শতাধিক দেহ গায়েব করতে হয়েছে
তার দাবি, ধর্মস্থলা অঞ্চলে যে সমস্ত গরিব ভিক্ষাজীবীরা আসতেন, তাদেরকেও খুন করা হতো। তিনি বলেছেন, চেয়ারে হাত-পা বেঁধে মুখে তোয়ালে চাপা দিয়ে খুন করা হতো ওই ভিক্ষাজীবীদের। তিনি নিজে এমন বহু ঘটনার সাক্ষী।
• প্রশ্ন উঠছে, এত দিন পরে কেন অভিযোগ?
ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি চান এই খুন ও নির্যাতনের যথাযথ বিচার হোক। কারো নাম উল্লেখ না করে ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন, মন্দিরের কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি জানলেও কখনো পুলিশের কাছে যাননি। বরং তাকে ভয় দেখিয়ে দেহ গায়েব করতে বলা হতো। তার আশঙ্কা, মূল অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করলে তিনি খুন হতে পারেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘‘কোনো প্রশ্ন করলে বলা হতো আমাকেও টুকরো টুকরো করে কেটে পুঁতে দেওয়া হবে। ক্ষতি করা হবে আমার পরিবারের।”
২০১৪ সালে মন্দিরের কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির দ্বারা তার পরিবারের এক নারীর যৌন হেনস্থার পরেই মন্দিরের চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। নিজের পরিবার নিয়ে ধর্মস্থলা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। প্রাণের ভয়ে লুকিয়ে কাটাচ্ছিলেন এত দিন।
প্রবীণ আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এস বালান-সহ আইনজীবীদের এক প্রতিনিধিদল কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে দেখা করার পরেই এসআইটি গঠন করে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন যথাযথ তদন্ত হবে। মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, তদন্তে তাদের সমর্থন রয়েছে।
অভিযোগকারীর আইনজীবী ওজস্বী গৌড়া অবশ্য বলেছেন, পুলিশের কাছে কবর দেওয়ার জায়গা ও ছবি জমা দিলেও পুলিশ সেই স্থানটি এখনো পরিদর্শন করেনি।
পাশাপাশি, এই অভিযোগ সামনে আসার পরেই একাধিক নিখোঁজ মামলার পুনর্তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন নিখোঁজদের বাড়ির লোক। আইনজীবী বালানের কথায়, ‘‘অন্তত ৩৬৭টি রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ বা মৃত্যু সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ধর্মস্থলায়।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
এনএন/ ২৮ জুলাই ২০২৫