এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া:
“জুলাই বিপ্লবের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই,” ‘প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বৈষম্য নয়, সাম্য চাই’ স্লোগানে কক্সবাজারের চকরিয়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি, প্রতিবাদ মিছিল করেছে কিন্ডারগার্টেন এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত অন্তত তিন শতাধিক শিক্ষক শিক্ষিকা।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বেলা এগারোটার দিকে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধনে সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় শিক্ষা অধিদফতরের নেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষক শিক্ষিকা এবং উদ্যোক্তাসহ সচেতন নাগরিকবৃন্দ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল আখের, সহসভাপতি চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান আরিফ, চকরিয়া গ্রামার স্কুলের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, সংগঠনের সদস্য সচিব ও সাহারবিল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ প্রমুখ।
দুপর বারোটার দিকে মানববন্ধন শেষে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল আখের ও চকরিয়া গ্রামার স্কুলের অধ্যক্ষ মোঃ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে উপস্থিত কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন মুহাম্মদ আলমগীর এর কাছে দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার যখন সবার জন্য সমান শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলছে, সেখানে কেন কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার বাইরে থাকবে। আমরা বৈষম্যমূলক এধরনের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন চাই। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় আমরা সাম্য চাই, সমান অধিকার চাই।
তারা আরও বলেন, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরাও জাতীয় শিক্ষাক্রমে পাঠ গ্রহণ করে, বছরজুড়ে প্রস্তুতি নেয়। অথচ প্রতিষ্ঠান সরকারি নয়—এই অজুহাতে তাদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে প্রশ্ন উঠছে, ‘শিক্ষা কি প্রতিষ্ঠাননির্ভর, না শিক্ষার্থীর যোগ্যতা ও মেধাভিত্তিক?’
চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের শিক্ষক প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল আখের বলেন, সন্তানদের মানসম্মত লেখাপড়া করার জন্য কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মূলত অভিভাবকদের চাহিদা বেশি। গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে অনেক পরিবারই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তান পাঠাতে চান না নানা কারণে। যেমন শিক্ষকের স্বল্পতা, অবকাঠামোর দুরবস্থা তো আছেই, পাঠদানের মান নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সেই জায়গা থেকে নানা রকম কেজি স্কুল গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুল নির্দিষ্ট কোনো সরকারি স্বীকৃতির আওতায় না থাকলেও, বাস্তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। মানসম্মত লেখাপড়া উপহার দিচ্ছে। সুতারং কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোকে সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা মানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গলাটিপে হত্যার করার শামিল!।
জানা গেছে, ১৭ জুলাই ২০২৫, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একটি পরিপত্র জারি করে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় কেবলমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অংশ নিতে পারবে। পক্ষান্তরে কিন্ডারগার্টেন বা এনজিও পরিচালিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাতে সুযোগ পাবে না।
শিক্ষা অধিদফতর কতৃক এধরনের পরিপত্র জারির পর থেকে দেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক-উদ্যোক্তাদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
এরই জেরধরে সারাদেশের সঙ্গে সংগতি রেখে বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহের শিক্ষক শিক্ষিকা এবং উদ্যোক্তাদের অংশ গ্রহনে মানববন্ধন প্রতিবাদ মিছিল করেছে। ##