ঢাকা, ১৪ আগস্ট – মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম কেউ বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (১৩ আগস্ট) ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এমন মন্তব্য করেন।
ট্রাইব্যুনাল-২-এর অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো.মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীর মরদেহ পোড়ানো এবং ৪ আগস্ট একজনসহ মোট সাতজনকে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ এই মামলার ১৬ আসামির অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। তারা এ সময় বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। আড়াই ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে শুনানি শেষ হয়।
‘পালিয়ে গেছে, মরেনি, এটাই কি অপরাধ’
সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলামের আইনজীবী ছিলেন মাহাদী হাসান ও আসাদুজ্জামান বাবু। তারা বলেন, এই মামলায় ৫৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। সাক্ষীদের কেউই জবানবন্দিতে শাহিদুলের সম্পৃক্ততার কথা বলেননি। এই মামলায় ২১টি জব্দ তালিকা আছে, সেখানেও তার সম্পৃক্ততা নেই।
গণঅভ্যুত্থানের এক মাস পর চারটি জাতীয় গণমাধ্যম সংবাদ করে এই ঘটনায়, সেখানেও শাহিদুলের নাম আসেনি। সেই সঙ্গে এই আসামির পক্ষে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনো দালিলিক প্রমাণ আনুষ্ঠানিক অভিযোগে নেই।
এসব কারণে এই মামলা থেকে শাহিদুলের অব্যাহতি চান তারা। কল রেকর্ডসহ কিছু তথ্য–প্রমাণ চেয়ে শাহিদুল ইসলামের পক্ষে এই আইনজীবীরা দুটি আবেদন করলে তা খারিজ করেন ট্রাইব্যুনাল।
এই মামলা থেকে ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেনের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী এস এম মেরাজুল আলম। তিনি বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট আরাফাত অন্য এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। পরদিন ৫ আগস্ট তার দায়িত্ব পড়েছিল আশুলিয়ায়। আরাফাত গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তাকে কখনো অস্ত্র দেওয়া হয়নি। ফলে গুলি করে কাউকে হত্যা করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া তিনি ডিবির কর্মকর্তা হওয়ায় পুলিশের কাউকে লাশে আগুন দিতে নির্দেশ দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি সেখানে কোনো অপরাধ করেছেন এমন কোনো ভিডিও ফুটেজ বা অন্য কোনো প্রমাণও নেই।
এই মামলায় মোট ১৬ জন আসামি। এই মামলা থেকে সব আসামির পক্ষেই অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে আটজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তারা হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ এ মামলার আট আসামি পলাতক।
এর আগে ৭ আগস্ট এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেছিল প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২১ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
সূত্র: জাগো নিউজ
এনএন/ ১৪ আগস্ট ২০২৫