রামুতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কৃষি জমি জবরদখলের চেষ্টা ও রোপন করা ধান ক্ষেত গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৯ জুলাই দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের রাজারকুল-চেইন্দা সড়কের পাশে ব্যবসায়ী নুরুল আমিনের জমিতে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রামু থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
জমির মালিক মাস্টার নুরুল আমিন রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের খন্দকারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি। নুরুল আমিনের স্ত্রী জাহেদা সিদ্দিকা জানিয়েছেন- স্বামীর ক্রয়কৃত জমি দীর্ঘদিন জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিসের ছেলে নুরুল হাকিম ও তার সহযোগিরা। ইতিপূর্বে একাধিকবার জমি জবরদখলের চেষ্টা হলে তার স্বামী নুরুল আমিন ২ সপ্তাহপূর্বে রামু থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে নুরুল হাকিম ও তার ছেলেরা কতিপয় সমন্বয়ক ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে গত ২২ জুলাই তার স্বামী নুরুল আমিনকে হয়রানির উদ্দেশ্যে একটি রাজনৈতিক মামলায় আটক করে কারাগারে প্রেরণ করে। স্বামীকে আটকের পর পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগে নুরুল হাকিমের নেতৃত্বে ভূমিদস্যু চক্র বেপরোয়া হয়ে জমি দখলের জন্য বারবার হুমকি দিতে শুরু করে।
এতে নিরুপায় হয়ে ভূমিদস্যু চক্রের কবল থেকে জমি রক্ষায় তার (জাহেদা) পরিবার ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারার বিধান মোতাবেক নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানিয়ে গত ২৭ জুলাই কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমআর মামলা (নং ৬০৮/২০২৫) দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে বিরোধীয় জমিতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য উভয়পক্ষকে নোটিশ প্রেরণ করে রামু থানা পুলিশ। কিন্তু নুরুল হাকিম ও তার সহযোগিরা মামলার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর গত ২৯ জুলাই দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ২০/৩০ জন ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে জমিতে সদ্য রোপন করা ধান ক্ষেত গুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন নুরুল হাকিম সওদাগর ও তার ছেলে নাছির উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন, হেলাল উদ্দিন, এমদাদুল ইসলামের স্ত্রী মর্জি আকতারসহ পরিবারের আরও একাধিক সদস্য।
গভীর রাতে জমি দখলের চেষ্টা ও ধান ক্ষেত গুড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে অবহিত হওয়ার পর তিনি (জাহেদা) পুলিশের পরিষেবা ৯৯৯ এ কল করে সহযোগিতা চান। খবর পেয়ে রামু থানার এএসআই কাউছার সহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে জমি দখলে জড়িত সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
পরে এ নিয়ে রামু থানাকে অভিযোগ করা হলে রামু থানার ওসি মো. তৈয়বুর রহমান আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জমি জবরদখল চেষ্টায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এসআই আবদুল খালেককে নির্দেশ দেন।
মাস্টার নুরুল আমিনের স্ত্রী জাহেদা সিদ্দিকা আরও জানান- ২৭/১২/১৯৬৭ ইংরেজি তারিখে ৬৯৮২ নং রেজিঃ কবলা মূলে তপশীলের জমি যৌথভাবে খরিদ করে তার স্বামী মাস্টার নুরুল আমিন ও তার বড় ভাই নুরুল হাকিম। ক্রয়ের পর থেকে আপোষ মতে প্রত্যেকে ২৪ শতক জমি নিজ নিজ আমল দখল মতে ভোগ দখলে থাকাবস্থায় নুরুল হাকিম তার অংশের ২৪ শতক জমি মনিরুজ্জামান ও নুরুল হককে বিক্রি করেন। পরে বিএস জরিপ চলাকালে নিজ নিজ দখল মতে মাস্টার নুরুল আমিনের নামে ৮ আনা অংশে ২৪ শতক, খরিদ্দার মনিরুজ্জামানের নামে ৪ আনা অংশ ও খরিদ্দার নূরুল হকের নামে ৪ আনা অংশ লিপিবদ্ধ করে বিএস ৯৮৪ নং খতিয়ান রেকর্ড প্রচার হয়। রেকর্ডীয় মালিক নূরুল হকের অংশও ভিন্ন ব্যক্তিকে বিক্রি করে উত্তরাংশে দখল বুঝিয়ে দেয়। মনিরুজ্জামানের খরিদা ৪ আনা অংশের ১২ শতক জমি গত ১১/০৬/১৯৮০ ইংরেজি তারিখের ৪৯৭৭ নং রেজিঃ কবলা মূলে পুনরায় নুরুল হাকিম খরিদ করেন।
জাহেদা সিদ্দিকা আরও জানান- সম্প্রতি জায়গা জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মাস্টার নুরুল আমিনের প্রাপ্ত অংশ রাস্তার পার্শ্বে ও অগ্রভাগে হওয়ায় নুরুল হাকিম লোভের বশবর্তী হয়ে নিজ ছেলেদের উস্কানী ও বাহু বলে বলিয়ান হয়ে ভাড়াটে লোকজন দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় মাস্টার নুরুল আমিনের জমি জবরদখলে মরিয়া হয়ে এসব ঘটনা সংগঠিত করছে।
জমির মালিক মাস্টার নুরুল আমিনের ছেলে আবরার আল আমিন ও মিশকাত আল আমিন শুভ জানান- তাদের জেঠা নুরুল হাকিম সওদাগর স্থানীয় বিচার-শালিশ অমান্য করে জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে নুরুল হাকিম মোটা অংকের টাকার মিশন নিয়ে তাদের পিতা মাস্টার নুরুল আমিনকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাগারে পাঠিয়ে পুরো পরিবারকে হয়রানি করছে। বর্তমানে পিতা কারাগারে থাকার সুযোগে জমি দখলের জন্য বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সীমানা পিলার ও ধানক্ষেত গুড়িয়ে দিয়েছে। জমি দখলে বাধা দিলে তাদের মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
রামু থানার এসআই আবদুল খালেক জানিয়েছেন- এ জমি নিয়ে মামলা চলমান থাকায় বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে উভয় পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
## সোয়েব সাঈদ, রামু প্রতিনিধি, ০১ আগস্ট ২০২৫