নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া::
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ২ লাখেরও বেশি মানুষের সরকারি স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলেও চরম জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা। দিন দিন সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদের উদ্যোগে এবং সৌদি সরকারের অর্থায়নে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে এটি একটি প্রকল্পভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হিসেবে চালু হয়, পরবর্তীতে এটি ২০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং বর্তমানে ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী এখানে ১০ জন এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৯ জন, যার মধ্যে ২ জন প্রশিক্ষণে রয়েছেন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ৫ জন কর্মরত। হাসপাতালের কনসালটেন্ট (বিশেষজ্ঞ) পদে থাকা ৪টি পদের মধ্যে রয়েছে মাত্র ২ জন। সার্জারি ও মেডিসিন কনসালটেন্টের পদ শূন্য রয়েছে।
মেডিকেল অফিসার পদে ৩ জন এবং নার্সিং পদে ২৫টি পদের বিপরীতে ২০ জন কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু রোগীর তুলনায় এই সংখ্যাটি খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ২২,৫৪২ জন, জরুরি বিভাগে ৫,৩২৮ জন এবং আবাসিক ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন ১,৪০১ জন রোগী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৩১ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সদের। জরুরি বিভাগে গড়ে দৈনিক ১৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে প্রায় প্রতিদিন মারামারি ও আহতদের চাপও এই বিভাগে লেগেই থাকে।
রোগীদের অভিযোগ, অনেক সময় ওয়ার্ডের রোগীদের চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে রোগী নিয়ে যেতে হয়। নার্সরা বেডে গিয়ে সেবা দিতে রাজি হন না। তদ্বির করেও সেবা মেলে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক রোগী ও স্বজন।
হাসপাতালের টয়লেট অপরিচ্ছন্ন থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। ফার্মেসীতে দারোয়ান ও ওয়ার্ড বয় ওষুধ বিতরণ করছেন, এমন দৃশ্যও চোখে পড়েছে। কখনো কখনো সুইপার বা ঝাড়ুদারও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজিবুর রহমান জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে আমরা সেবা চালিয়ে নিচ্ছি। তবে জনবল সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে জনবলের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আমরা আশাবাদী, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলে জনবল সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বাড়তে থাকা রোগীর চাপের সাথে সেবা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন দরকার। এক্স-রে ও ব্লাড ব্যাংক চালু থাকলেও যন্ত্রপাতির সঙ্কট রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
###