পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে জনমনে নানামুখী নেতিবাচক অনিয়ম অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে হরহামেশা। এমনকি পান থেকে চুন খসে পড়লেই সব পুলিশ সদস্যকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করাও বর্তমান সমাজে একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তবে কিছু কিছু পুলিশ সদস্যের দায়িত্বশীল ও মানবিক আচরণ এবং পেশাগত মানবিক কাজের বদৌলতে এখনো আমজনতার মাঝে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি জিইয়ে রয়েছে।
গভীর রাতে তেমন একটি মানবিক কাজে সহায়তা করে সাধারণ মানুষের প্রশংসা পেয়েছেন চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ ইয়াছিন মিয়া।
বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার ঘটনা। স্পট চকরিয়ার উপজেলার জিদ্দাবাজার। উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের শাহ উমরাবাদ এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন (৬৫) কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। বৃহস্পতিবার ভোররাতে তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে চকরিয়া উপজেলা উপজেলা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাড়ি থেকে বাহির হন।
পথিমধ্যে জিদ্দা বাজার এলাকায় পৌঁছাতে কোন গাড়ি না পেয়ে স্ত্রী সন্তানের কাঁদে ভর করে হাঁটতে থাকেন হাসপাতালে উদ্দেশ্য। পথিমধ্যে এসে পৌঁছেন চকরিয়া থানা পুলিশের একটি ডিউটি গাড়ি। তখন গাড়িতে থাকা চকরিয়া থানার ওসি তদন্ত মোঃ ইয়াছিন মিয়া তাদের জিজ্ঞেস করেন এতো রাতে হেঁটে হেঁটে কোথায় যাচ্ছেন। সেখানে একজন পুলিশ সদস্যকে তারা ভয়ে ভয়েই বলেন বাবা খুব অসুস্থ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।
তখন পুলিশ অফিসার তাদেরকে পুলিশের গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া কথা বললে অসুস্থ জাকির হোসেন বলেন হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হলে খুব উপকার হবে।
তাৎক্ষণিক রোগী জাকির হোসেন ও তাঁর স্ত্রী সন্তানকে পুলিশের গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দেন এবং নিজে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে আনার ব্যবস্থা করেন। এরপর রোগী জাকির হোসেন এর সুচিকিৎসা প্রদানের জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. ইয়াছিন মিয়া।
জানা গেছে, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের খারাপ দিকগুলো খুববেশি আলোচিত হয়ে ওঠে। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করার পাশাপাশি তারা যে মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই তার প্রমাণ চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. ইয়াছিন মিয়া। অবশ্য তিনি চকরিয়া থানায় আগত লোকজনকেও পুলিশি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ অমায়িক এবং ভদ্রতার পরিচয় দেন। তাঁর আচার-আচরণেও সন্তোষ প্রকাশ করেন সেবাগ্রহীতারা।
জানতে চাইলে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. ইয়াছিন মিয়া বলেন, রাতে ডিউটি করার সময় দেখি একজন অসুস্থ রোগীকে নিয়ে পরিবার সদস্যরা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাড়ি না পেয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছে না। এ অবস্থায় আমি পুলিশের ডিউটি গাড়ি থামিয়ে ওই রোগীসহ স্বজনদের হাসপাতালে পৌঁছে দিই। চিকিৎসার যাবতীয় সহযোগিতা করি।
তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগ বা বিপদের মুহুর্তে বিপন্ন মানুষকে সহযোগিতা করা মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সকল নাগরিকের দায়িত্ব। আমি মনে করি, সেই দায়িত্ব থেকে একজন বিপন্ন রোগীকে সামান্য সহযোগিতা করতে পেরে নিজের কাছে ভালো লাগছে। আসুন সবাই বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। ##