পেকুয়ার প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ এক সামাজিক ব্যাধি জুয়া। দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে বসছে অনলাইন ও অফলাইন জুয়ার আসর। স্কুল-কলেজপড়ুয়া কিশোর থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী মানুষজন পর্যন্ত কেউই এর বাইরে নয়। এর ফলশ্রুতিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে চুরি, মাদক ও নানা অপরাধ। সমাজে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা, ভেঙে পড়ছে পারিবারিক বন্ধন, ধ্বংস হচ্ছে মূল্যবোধ। অর্থনৈতিক ক্ষতিও কম নয় একদিকে জুয়ায় সর্বস্বান্ত হওয়া, অন্যদিকে অপরাধের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিরীহ জনগণ।
সম্প্রতি উজানটিয়ার ৭নং ওয়ার্ডের গোদারপাড় এলাকায় ঘটেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। অতি দরিদ্র এক এতিম শিশুর তিনটি ছাগল রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যায়। ছাগলগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। এলাকাবাসীর দাবি চুরির পেছনে রয়েছে স্থানীয় কিছু জুয়াড়ী, যারা জুয়ায় হেরে অর্থ সংকটে পড়ে এসব অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। একই ওয়ার্ডের নুরীর পাড়ায়ও ২৯ জুলাই চুরি হয় আরও দুটি ছাগল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউপি সদস্য আবু আহমদ (সোনামিয়া মেম্বার) চুরির ঘটনায় তিনজনকে সনাক্ত করলেও মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে দুজনকে ছেড়ে দিয়ে ও টাকা দিতে না পারায় একজনকে থানায় দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন। এতে চোরদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
পরদিন, ৩০ জুলাই নতুনঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেও চুরি হয় চারটি বৈদ্যুতিক ফ্যান ও মূল্যবান সামগ্রী। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফাতুল মোস্তফা এই চুরির ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করলেও কোনো সুফল না পেয়ে পেকুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় ও থানায় অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।
এই সব অপরাধ কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং একটি গভীর সামাজিক সংকটেরই বহিঃপ্রকাশ। জুয়াকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে এক ভয়াবহ অপরাধ চক্র। স্থানীয়রা বলেন, গাঁজা, ইয়াবা আর জুয়ার ভয়াল ছোবলে আমাদের সমাজ ভেঙে পড়ছে। উঠতি বয়সের ছেলেরা ধ্বংসের পথে হাঁটছে, পরিবারগুলো হচ্ছে সর্বস্বান্ত। তাদের মতে, জুয়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকেই এখন চুরি-ডাকাতি বা মাদক বেচাকেনায়া জড়িয়ে পড়ছে।
গোদারপাড় এলাকার একাধিক দোকান যেমন আহমদ ছবির ছেলে ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেনের চায়ের দোকান, জয়নালের দোকান,বাবুলের দোকান, আইয়ুব আলীপাড়া স্টেশনে মৃত সিরাজের পুত্র সেলিম ভান্ডারী, খালিক্কা বাপ, জহির ও বক্কর বাপের দোকান প্রায় প্রতিদিনই জুয়ার জমজমাট জুয়ার আসর বসে। এসব আসরে দিনরাত চলে অনলাইন ও অপলাইন জুয়া।
অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেনের জন্য রয়েছে অনলাইন জুয়ার এজেন্ট ও মাস্টার এজেন্ট।
সোনালী বাজার ও পেকুয়ার অনেক বড় বড় জুয়াড়ী ও এসব দোকানে জুয়া খেলে দিনরাত। এরাই মূলত এসব চুরির আসল নায়ক। এমন পরিস্থিতি ৮নং ও ১নং ওয়ার্ডেও দৃশ্যমান।
সচেতন মহল বলছে, যদি এখনই প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পুরো পেকুয়ার সামাজিক কাঠামোই ধ্বংস হয়ে পড়বে। পরিবার, শিক্ষা, নৈতিকতা সব হারিয়ে যাবে এক ভয়াল অন্ধকারে।
এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল মোস্তফা জানান, আমরা এলাকায় চুরি ও জুয়ার প্রসার সম্পর্কে অবগত। জনগণের সহযোগিতা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রস্তুত। কেউ অপরাধীদের বিষয়ে তথ্য দিতে পারলে নির্ভয়ে আমাদের জানাতে পারেন।
এদিকে, সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। কারণ, এই ভয়ঙ্কর চক্র যদি এখনই দমন না করা হয়, তাহলে তা শুধু কয়েকটি গ্রামের সমস্যা নয়, বরং পুরো পেকুয়ার গ্রামীণ সমাজ কাঠামোকে গ্রাস করে ফেলবে।