কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলি ইউনিয়নের পহরচাঁদা গুবিন্দপুর এলাকায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে এবং পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া স্বামীর নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা নাছিমা আক্তার (২১)। তিনি ওই এলাকার ওমান প্রবাসী এনামুল হকের স্ত্রী এবং এক সন্তানের জননী।
গত ৮ আগস্ট রাতে স্বামী ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে নাছিমাকে গুরুতর জখম করেন। খবর পেয়ে ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার স্বজনরা পুলিশের সহায়তায় শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এর আগে ২২ জুলাই শ্বাশুড়ির মৃত্যুর পর নাছিমার স্বজনরা শ্বশুরবাড়িতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। ওইদিন নাছিমার চাচা মহিউদ্দিন, চাচী ফেরেজা বেগম, ছকিনা বেগম, ফুফি মনোয়ারা বেগম, বোনের জামাই আবুল হাসেম, শওকত, আব্দু শুক্কর ও বড় বোন আমেনা বেগমকে মারধর করা হয়। ফেরেজা বেগম রক্তাক্ত জখম হন। উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় তারা প্রাণে রক্ষা পান। স্বজনরা চলে আসার পর স্বামী এনামুল আবারও নাছিমাকে মারধর করেন।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল পেকুয়া সদর ইউনিয়নের জালিয়াখালী এলাকার মৃত সাহাব উদ্দিনের মেয়ে নাছিমার সঙ্গে বরইতলি পহরচাঁদা গুবিন্দপুর এলাকার আমির হোসেনের ছেলে ওমান প্রবাসী এনামুল হকের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ২২ মাস বয়সি এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
নাছিমার অভিযোগ, বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। বাপের বাড়ি থেকে একাধিকবার টাকা দেওয়া হলেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। তিন মাস আগে দেশে ফিরে এনামুল পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং কথায় কথায় তালাক দেওয়ার হুমকি দেন।
নাছিমা জানান, এনামুলের এটি দ্বিতীয় বিয়ে হলেও বিয়ের আগে তিনি নিজেকে অবিবাহিত বলে দাবি করেন। এনামের প্রথম স্ত্রী মারুফা জন্নাতকে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর তালাক দেন (তালাক নম্বর ২১/২২, বহি নং মি.তালাক)। কাবিননামায় অবিবাহিত হিসেবে তথ্য দিয়ে প্রতারণা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন নাছিমা। মারুফার বাড়ি কৈয়ারবিল খিলছাদক এলাকায়। লোকেমুখে শুনেছি এনাম তিনটা বেয়ে করেছে। তবে আমরা একজনকে সনাক্ত করতে পেরেছি।
নাছিমা ও তার স্বজনদের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন শ্বশুর আমির হোসেন, দেবর সাইফুল ইসলাম, ননদের জামাই খালেক, সাহাব উদ্দিন, ননদ তাহেরা বেগম ও সাবেকুন্নাহার। নাছিমার দুই বোনের শ্বশুরবাড়িও এনামের বাড়ির পাশে।
নাছিমা আক্তারের চাচা মহিউদ্দিন বলেন, নাছিমার বাবা নেই। এতিম মেয়েকে আমরা বিয়ে দিয়েছি। এনাম লম্পট ও লোভী প্রকৃতির। এনামের আগে একবার বিয়ে হয়েছে সেটা গোপন রেখেছিল। পরবর্তীতে আমরা জানতে পেরেছি। কাবিননামায় এনাম অবিবাহিত উল্লেখ করেছেন। যেটি শঠামি ও চরম প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল।
চকরিয়া হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মোফাজ্জল জানান, আমরা তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করেছি। তাকে কোপানো হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় সে অসুস্থ হয়ে বন্দী ছিল। পুলিশ যখন তাদের বাড়িতে যায় তখন তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পুলিশের সামনেও মেয়েটাকে মারধর করেছে। যেটা পুলিশের কাছে ভিডিও রয়েছে। আমরা স্থানীয় মেম্বার ও গ্রাম পুলিশের সহায়তায় মেয়েটাকে উদ্ধার করি। স্থানীয়রা বলছেন এনাম কয়েকটা বিয়ে করেছে।