বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা থেকে আগত অভিবাসীরা মনে করেন, কানাডায় নিজের একটি বাসস্থান মানে স্বপ্ন পূরণ। শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি যদি নিজের একটা ঘর থাকে, তবে যেন পরিপূর্ণ হয় এই অভিবাসনের যাত্রা। একটি বাড়ি মানে শুধু দেয়াল-ছাদ নয়, মানে হলো আত্মমর্যাদার এক টুকরো ভূখণ্ড, যার ভেতরে ঘুমিয়ে থাকে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, সন্তানদের বেড়ে ওঠার গল্প।
এই স্বপ্নপূরণের পথেই অভিবাসীরা পা রাখেন কানাডার মর্টগেজ ব্যবস্থায়। মর্টগেজ—যা একদিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী দায়বদ্ধতার শিকল পরায়। ব্যাংক বা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই ঋণ নিতে গিয়ে তাঁরা পড়ে যান জটিল শর্তের জালে। সরকার এই প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব স্বচ্ছ রাখতে আইনি কাঠামো তৈরি করেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়োগ দিয়েছে, কিন্তু তবুও কিছু দালাল ও প্রতারক এই ব্যবস্থার ফাঁকফোকর গলে প্রবেশ করে। তাদের ছলনায় স্বপ্নের ঘর একসময় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়—যেখানে বাড়ির চাবি হারিয়ে যায়, আর হাতে থাকে শুধু চাবির রিংয়ের স্মৃতি।
কানাডায় ফার্স্ট-টাইম হোম বাইয়ারদের জন্য সরকারের তরফে থাকে নানা রকম প্রণোদনা। যেমন: “ফার্স্ট টাইম হোম বাইয়ার ইনসেনটিভ,” “হোম বাইয়ারস প্ল্যান,” “GST/HST রিবেট,” ইত্যাদি। এছাড়া ফিক্সড এবং ভ্যারিয়েবল রেটসহ বিভিন্ন ধরণের মর্টগেজ প্যাকেজ প্রদান করে ব্যাংকগুলো। বেশিরভাগ নতুন অভিবাসী ‘ফিক্সড রেট’-এর নিরাপদ মোড়ক বুঝে উঠতে না পেরে ঝুঁকির মধ্যে পড়েন ভ্যারিয়েবল রেট কিংবা প্রাইভেট লোনে। সরকার এবং ব্যাংক উভয়ই চায় একজন গ্রাহক যেন সঠিক পদ্ধতিতে নিজের ঘরের মালিক হতে পারে।এই ব্যবস্থার সুবিধা নিতে গিয়েই অনেকে পড়ে যান ছলনাময়ী ব্রোকারদের ফাঁদে। বিশেষ করে নতুন অভিবাসীরা, যাঁদের তথ্য, ভাষা এবং নীতিমালা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই।
কানাডার প্রতিটি প্রদেশে মর্টগেজ ব্রোকার বা এজেন্ট হতে হলে নির্ধারিত কোর্স এবং পরীক্ষা পাস করতে হয়। লাইসেন্স প্রদান করে FSRA (Ontario), BCFSA (British Columbia), কিংবা RECA (Alberta)। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বহু বাংলাদেশি-দক্ষিণ এশীয় ব্রোকার এই লাইসেন্স ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ নিজেদের পরিচয় দেন “ভাইয়ের বন্ধুর মাধ্যমে বিশেষ রেট পাইয়ে দিবেন”, আবার কেউ বলেন, “ব্যাংকে আমার লোক আছে।”
এই ছায়া ব্রোকাররা সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক গ্রুপ, এমনকি মসজিদ/মন্দির বা কমিউনিটির সভা-সমাবেশের মাধ্যমে টার্গেট করেন নতুন অভিবাসীদের। তাঁরা এমন এক সংস্কৃতির অংশ যেখানে “আঞ্চলিকতা”, “ধর্মীয় সম্প্রদায়” কোথাও কোথাও “দেশীয় রাজনৈতিক সম্পর্ক” বড় হয়ে দাঁড়ায় সকল আইনি প্রক্রিয়ার চেয়ে।
যখন ব্যাংক থেকে লোন না মেলে, তখন কিছু ব্রোকার বলে, “ব্যাংক আপনাকে দেবে না, প্রাইভেট লোনই এখন একমাত্র উপায়।” এই প্রাইভেট লেন্ডাররা প্রথমে ৫-৬% সুদে লোন দেয়, পরে চাপিয়ে দেয় ১৮-২৪% সুদের বলয়। মাসিক কিস্তি দ্বিগুণ হয়ে যায়, যোগ হয় হিডেন ফি, এবং বাড়ে ডিফল্টের ঝুঁকি।
কয়েক বছর আগেও যাঁদের চোখে ছিল অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশা, কাঁধে ছিল অভিবাসী জীবনের অদৃশ্য ভার—আজ তাঁরাই শহরের নামকরা মর্টগেজ ব্রোকার। তাদের মুখে আজ এক অন্যমাত্রার হাসির ঝলক। শার্টের কলারে ঝকমকে ব্র্যান্ডের ছাপ, পায়ে দামি চামড়ার জুতো, হাতে জাগুয়ারের চাবি নয়তো পোর্শের। চেহারার মধ্যে একরকম তেজ, যেন আলো ঝলমল করছে—কিন্তু সে আলো প্রজ্ঞার নয়; তা লোভের এবং প্রতারণার! চোখে সফলতার ছায়া থাকলেও মন ছায়াহীন। কে বলবে, এই মুখগুলো একদিন ছিল বিস্ময়ে বিমূঢ়, জীবনের মৌলিকতা নিয়ে সংগ্রামী? এখন সে সংগ্রাম ঢেকে গেছে বিলাসিতার মুখোশে—যার আড়ালে রয়ে গেছে এক চোরাবালি জীবন।
এই বদলের পেছনে নেই কোনো পরিশ্রমের জয়গান, আছে দুর্নীতির কালো ছায়া, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কোটি কোটি টাকা, আর সেই টাকাকে সাদা করে ফেলার আন্তর্জাতিক ফর্মুলা—মর্টগেজ।
প্রত্যেকটি মর্টগেজ যেন হয়ে উঠেছে টাকার ধোয়ার মেশিন। বাংলাদেশে কোনো এক ‘নগর উন্নয়ন প্রকল্পে’ থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থ, কোনো ‘স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটার কমিশন’ কিংবা বিদেশি ঋণ প্রকল্পে আত্মসাৎ করা লাখ লাখ ডলার—বাংলাদেশের গরীব জনগণের সব টাকা এখন কানাডায় পাচার হয়ে ভদ্রলোকি স্যুট-কোটের পকেটে ঢুকেছে।
তারা কমিউনিটির ছোটো বড় সংগঠনের “স্পন্সর।” অনুষ্ঠানের ব্যানারে তাঁদের নাম থাকে সবার ওপরে। পোষ্টারে তাঁদের ছবি থাকে হাস্যোজ্জ্বল। টাকার অঢেল খরচে কানাডিয়ান সমাজের সাথে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার এই চেষ্টা যেন আরেক নাটকের দৃশ্য। অথচ যাঁদের টাকায় এই সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, তাঁরা আজ সর্বস্ব খুঁইয়ে নগরীর লাখো মানুষের ভিড়ে হারিয়ে গেছে।
এই কালো টাকা সাদা করার যজ্ঞে শুধু মর্টগেজ এজেন্টই নয়—একটি সম্পূর্ণ সিন্ডিকেট কাজ করে। কিছু অসৎ রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, লোভী লইয়ার, কিছু কম্প্লায়েন্ট অ্যাপ্রেইজার, এমনকি প্রাইভেট লেন্ডাররা এই মহাপরিকল্পনার অংশ। একজন আইনজীবী বলবে, “এই ক্লজটা আমি দেখে নিয়েছি”—আসলে সে দেখে নিচ্ছে নিজের ফি কত বাড়ানো যায়। আর একজন রিয়েলটর ফ্লোর প্ল্যান না দেখেই বলে দেবে, “এই বাড়ি এক্সেলেন্ট ইনভেস্টমেন্ট।” কেউ বুঝে উঠার আগেই একটি ফাঁদ সই হয়ে যায়, যার পরিণতি: সর্বনাশ।
টরন্টোর জুবায়ের পরিবারের কাহিনি বলি। এক ধোকাবাজ মর্টগেজের পাল্লায় পড়ে অন্তিম সময়ে তারা $২৫০,০০০ ঋণ নিয়েছিল প্রাইভেট লেন্ডার থেকে। প্রথমে সবকিছু সহজ মনে হলেও, এক বছর পর মাসিক কিস্তি দাঁড়ায় $৪,৮০০। দিনে রাতেও কাজ করে ম্যানেজ না করতে পেরে শেষ পর্যন্ত বাড়িটি হারান তাঁরা।
নার্গিস চৌধুরি পরিবার। স্বপ্নের বাড়ি কিনেছিলেন $৮২০,০০০ মূল্যে। কিন্তু আয়ের তথ্য ছিল ভুয়া। ৮ মাস পর ব্যাংকের অডিটে ধরা পড়ে সবকিছু। বাড়ি ব্যাংক নিয়ে নেয়। এখন ভাড়া বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এতো গেলো মাত্র দু’টি উদাহরণ। এরকম বহু মানুষের স্বপ্ন ভেঙ্গেছে। হারিয়েছেন সুখ। বাড়ি হারানোর পর ভুক্তভোগীদের অনেকেই ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ বিষণ্ণতায় ভোগেন। ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ৬৮% মর্টগেজ প্রতারণার শিকার মানসিক সমস্যায় ভোগেন, ৪৩টি পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
কানাডার ফৌজদারি আইনে মর্টগেজ ফ্রডের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। তারপরও বহু প্রতারক মামলা চলাকালীন লাইসেন্স পাল্টে, আবার ব্যবসা শুরু করে।
২০২০ থেকে ২০২৪—এই পাঁচ বছরে অন্টারিও, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং আলবার্টা প্রদেশে ৭৮ জন দক্ষিণ এশীয় মর্টগেজ ব্রোকার বা এজেন্টের বিরুদ্ধে আইনত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন অন্তত ২৩ জন। অনেকের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে, তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া ইনকাম ডকুমেন্ট, সাজানো রেফারেন্স লেটার, এমনকি “গিফ্ট ডাউন পেমেন্ট”-এর মতো জালিয়াতিমূলক প্রক্রিয়ায় অংশ নেন।
অন্টারিওতেই ধরা পড়েছে সবচেয়ে বেশি—৩৮ জন দক্ষিণ এশীয় ব্রোকার। এদের মধ্যে ১২ জন বাংলাদেশি। শাস্তির ধরনে দেখা গেছে, বেশিরভাগের লাইসেন্স বাতিল, দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল, এবং গড় জরিমানা $৮৭,৫০০।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার চিত্র আরও উদ্বেগজনক। এখানে ২৫ জন দক্ষিণ এশীয় এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাতজন বাংলাদেশি ছিলেন এর মধ্যে। কিছু কেসে ১-৩ বছরের জেল ও প্রায় $১,২৫,০০০ জরিমানা করা হয়েছে।
আলবার্টা প্রদেশে ১৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৪ জন বাংলাদেশি। এখানকার শাস্তিগুলো তুলনামূলকভাবে কম হলেও, লাইসেন্স বাতিল, কমিউনিটি সার্ভিস, এবং জরিমানা ($৪৫,০০০ গড়ে) দেওয়া হয়েছে।
ফেক ইনকামের এক কারিগরের কাহিনি শুনুন। তার নাম সায়েম চৌধুরী (কল্পিত নাম)। টরন্টোর ব্রাম্পটন এলাকায় পরিচিত মুখ। তাঁর অফিসের দেয়ালে ঝুলে থাকত পলিসি রেট, ইন্টারেস্ট প্রজেকশন আর বড় বড় গর্বের সনদ। পর্দার আড়ালে তিনি ছিলেন এক মেকি জগতের কারিগর। আদালতে প্রমাণিত হয়, তিনি ২১টি মর্টগেজ আবেদন জাল তথ্য ও ভুয়া ইনকাম দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। চাকরিহীন গ্রাহকদের নাম সরকারি সংস্থার কর্মী হিসেবে দেখানো, ট্যাক্স রিটার্ন বানানো, এমনকি ‘ফেক গিফট লেটার’ তৈরি করে ইনকাম বাড়িয়ে দেখানো ছিল তাঁর রুটিন কাজ।
২০২৩ সালে, আদালত তাঁকে কানাডার ব্যাংকিং অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করে। তাঁর উপর ৫০ হাজার ডলার জরিমানা আর ১৮ মাসের পেশাগত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আদালত রায়ে উল্লেখ করে—“তিনি কেবল মর্টগেজ প্রতারণা করেননি, বরং একটি গোটা প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বংস করেছেন।” এই রায় ছিল কানাডার মর্টগেজ খাতে এক সতর্কবার্তা—যেখানে বলা হলো, প্রভাব খাটিয়ে কালো টাকা সাদা করা এক অপরাধ, যা সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়।
কিছু কেস এমন ছিল, যা শুধুই অপরাধ নয়—ছিল নৃশংসতা। টরন্টোর শফিকুল ইসলাম (কল্পিত নাম) ২০২২ সালে ২১টি ভুয়া মর্টগেজ আবেদন করে প্রায় $৪.২ মিলিয়ন ফ্রড করেন। উবার চালকদের ইনকাম $৩৫,০০০ থেকে ফুলিয়ে দেখানো হয় $৭৫,০০০—এবং এই ফাঁদে পা দিয়ে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হন। শাস্তি হিসেবে তাকে চার বছরের জেল, $১২০,০০০ জরিমানা করা হয়।
স্কারবোরোর নাদিয়া খান (কল্পিত নাম), এক মর্টগেজ এজেন্ট, যিনি নিজেকে বলতেন “কমিউনিটি ইনফ্লুয়েন্সার।” ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঈদ উৎসব, বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর স্পন্সরশিপ থাকত চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ২০২২ সালে কানাডার ফিনান্সিয়াল ট্রান্সঅ্যাকশন অ্যান্ড রিপোর্ট অ্যানালাইসিস সেন্টার (FINTRAC) তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ ছিল—তিনি প্রায় ৩৫ জন অভিবাসী পরিবারের জন্য মর্টগেজ প্রসেস করিয়েছেন ভুয়া ইনকাম ও বানানো নথিপত্র ব্যবহার করে, যেখানে অন্তত ১১টি ছিল প্রাইভেট লেন্ডার দিয়ে করা কৌশলী জালিয়াতি।
তদন্তে দেখা যায়, যাঁরা তাঁর মাধ্যমে মর্টগেজ নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই মাসিক কিস্তি পরিশোধে অক্ষম হন এবং একপর্যায়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হন। এই নারীর মর্টগেজ পলিসির ফাঁদে পড়ে তিনটি পরিবার অভ্যন্তরীণভাবে ভেঙে পড়ে ঋণের চাপে। আদালত তাঁকে ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা ও ৭৫,০০০ ডলারের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করে। পাশাপাশি, তাঁর লাইসেন্সও বাতিল করা হয়।
ব্রাম্পটনের নাসরিন আক্তার (কল্পিত নাম), যিনি বাংলাদেশি অভিবাসী নারীদের বিশেষভাবে টার্গেট করতেন, ১৭টি গিফ্ট ডাউন পেমেন্ট স্কিমে ভুয়া ডকুমেন্ট ব্যবহার করে বড় জালিয়াতি চালান। তার শাস্তি—১৮ মাস জেল, $৯৫,০০০ জরিমানা এবং ১০ বছরের জন্য কানাডার ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা।
ক্যালগারির রফিকুল হক (কল্পিত নাম) যিনি ‘প্রাইভেট লেন্ডার’-এর নামে মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন ৩৬% সুদের ভয়াবহ ঋণ, এবং শোনা গেছে তিনি ফিজিক্যাল থ্রেটও দিতেন। আদালত তাঁকে ক্রিমিনাল কোড ৩৮০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের জেল এবং আজীবনের জন্য মর্টগেজ ইন্ডাস্ট্রি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এইসব কেস শুধু আইনি দলিল নয়—মানুষের কান্নার ইতিহাস। শাস্তির হার বাড়লেও এখনও ৯২% কেসে অভিযুক্তরা প্যারোলে ছাড়া পেয়ে যায়, আর ক্ষতিপূরণ ফেরত পান মাত্র ১৭% ভুক্তভোগী। অধিকাংশ ভুক্তভোগী নিজেরাই ফেক ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেন, বা চুক্তির ছোট হরফ না পড়েই সাইন করেন—যা আদালতে প্রতারকের দায় কমিয়ে দেয়।
এমনও দেখা গেছে, এক প্রদেশে দোষী সাব্যস্ত হলেও, অন্য প্রদেশে নতুন লাইসেন্স নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করছে কেউ কেউ—ক্রস-প্রভিন্সিয়াল আইনের ফাঁক গলে তাঁরা বেঁচে যাচ্ছে বারবার।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল থেকে বৃহত্তর টরন্টোতে ১২ জন বাংলাদেশি ব্রোকার under investigation-এ রয়েছে।
মর্টগেজ প্রতারণা শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়—এটি এক মানবিক বিপর্যয়। একটি বাড়ি হারানো মানে কেবল চার দেয়ালের অস্তিত্ব নয়; এতে হারিয়ে যায় ভরসা, নিরাপত্তা, পারিবারিক বন্ধন ও ভবিষ্যতের আশ্বাস।
এইসব ‘স্বপ্নের সওদাগর’দের থামাতে হলে শুধু শাস্তি নয়, চাই শক্তিশালী নজরদারি, তথ্য যাচাই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, এবং সবচেয়ে বড় কথা—কমিউনিটিতে সচেতনতার জোরালো ঢেউ। কারণ প্রতারণা বন্ধ হয় তখনই, যখন মানুষ ফাঁদ চিনে নেয় আগেই।
দ্রষ্টব্য (Footnote):
আইনি সীমাবদ্ধতা ও নৈতিক কারণে এ প্রতিবেদনের সকল নাম কল্পিত।
তথ্যসূত্র:
১. Financial Services Regulatory Authority (FSRA) Ontario
২. Canadian Mortgage and Housing Corporation (CMHC)
৩. Ontario Superior Court of Justice
৪. CBC Marketplace Investigation: “The Mortgage Trap” (2023)
৫. Toronto Star: “How Some Mortgage Brokers Prey on Immigrants” (2022)